দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি কর্তৃপক্ষ অনধিগ্রহনকৃত জমির ভূ-গর্ভে অবৈধভাবে মাইনিং বিষ্ফোরনের মাধ্যমে সুরঙ্গ পথ তৈরি করে জনবসতীপূর্ণ এলাকায় ভূ-গর্ভস্থ পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করার ফলে ভূকম্পনে আশপাশের গ্রামের ঘরবাড়িতে ব্যাপক আকারে ফাটল দেখা দিয়েছে। প্রতিনিয়ত আতঙ্কিত অবস্থায় ঝুঁকি নিয়ে পরিবার পরিজন সহ জীবন যাপন করছে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসী। এ কারণে বড়পুকুরিয়া কোলমাইনিং লিমিটেডের প্রধান কার্যলয়ের মূল ফটকের সামনে ক্ষতিপূরনের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত জনসাধারণ।
১২ এপ্রিল খনি সংলগ্ন ক্ষতিগ্রস্ত চৌহাটি, বাঁশপুকুর-কাজীপাড়া ও হামিদপুর গ্রামের জনসাধারণ খনি কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বার বার প্রতারিত ও বৈষম্যের শিকার হয়ে ব্যানার-ফেস্টুন হাতে করে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে খনির মূল ফটকের সামনে সমবেত হন। বিক্ষোভ প্রদর্শন শেষে ক্ষতিপূরণসহ খনি কর্তৃপক্ষের সম্পাদিত চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে দিনব্যাপী অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন তারা।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসীর দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, খনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সম্পাদিত সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেক পরিবার থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চাকরির ব্যবস্তা করা, ভূ-গর্ভস্থ পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের ফলে ভূকম্পনে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত ঝুঁকিপূর্ণ ঘর বাড়িতে বসবাসরত পরিবারগুলোকে পূনর্বাসন করা এবং সাধারণ ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়িগুলো পূর্ণনির্মাণ করা, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পানির সমস্যা সমাধানে সুপেয় পানি ও জলের ব্যবস্থাসহ ধর্মীয় উপাসনালয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও রাস্তা নির্মাণ করা, ক্ষতিগ্রস্তদের এককালীন অবশিষ্ট ক্ষতিপূরনের টাকা প্রদান করা এবং যাদের জমি থেকে কয়লা উত্তোলন করা হচ্ছে তাদের ১০% হারে কয়লা উৎপাদন বোনাস দেয়া ইত্যাদি।
বিক্ষোভ সমাবেশে দাবিগুলোর ন্যায্যতা ও যৌক্তিকতা তুলে ধরে বক্তব্য দেন, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসীর দাবি আদায়ের সংগঠন ‘কৃষি ও বসতবাড়ি রক্ষা কমিটি’র সভাপতি মাহমুদুন নবী সোহান, সহ সভাপতি মাহমুদুন নবী মিলন, সদস্য সচিব সালমান মাহমুদ, জীবন ও বসতভিটা রক্ষা কমিটির অর্থ সম্পাদক মো. আতাউর রহমান সদস্য উজ্জল চন্দ্র, সাবেকুন নেসা প্রমুখ। এ সময় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার সকল জনগন ও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বক্তব্যে কৃষি ও বসতবাড়ি রক্ষা কমিটির সহ সভাপতি মাহমুদুন নবী মিলন ও সদস্য সচিব সালমান মাহমুদ বলেন, আমরা খনি সংলগ্ন উত্তরপাশের ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামের জনগন। বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি কর্তৃপক্ষ আমাদের কোন প্রকার নোটিশ বা জনমত যাচাই না করে কোম্পানির অধিগ্রহনকৃত জমি উত্তর পাশে অনধিগ্রহনকৃত জমির ভূ-গর্ভে অবৈধভাবে হটকারিতা মূলক মাইন বিষ্ফোরনের মাধ্যমে সুরঙ্গ করে চৌহাটি, কাজিপাড়া ও হামিদপুরের জনবসতীপূর্ণ গ্রামের নিচে কয়লা উত্তোলনের কার্যক্রম পরিচালনা করায় তাদের সৃষ্ট ভূকম্পনে ঘরবাড়িতে ব্যাপক আকারে ফাটল ধরেছে। এতে একজন গরিব মানুষ দিনে কাজ করে রাতে ঘুমাতে পর্যন্ত পারছে না। ঘরে সাপ ঢুকছে। ভূকম্পে আতঙ্কিত হয় ছোট শিশুরাও চিৎকার করে উঠছে। দীর্ঘ দিন অতিবাহিত হয়ে গেলেও কর্তৃপক্ষ তাদের সম্পাদিত সমঝোতা চুক্তি বাস্তবায়ন করছে না। এ বিষয়ে আমরা বার বার কর্তৃপক্ষকে অবগত করছি, তারা কর্ণপাত না করায় জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে একাধিক বার পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান সহ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছি কিন্তু এ পর্যন্ত কোন সমাধান বা পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় আজ আমরা এখানে সমবেত হয়েছি। যেহেতু আজ বড়পুকুরিয়া কয়লাখনিতে জ্বালানি সচিব ও পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান এসেছেন তাদের সঙ্গে দেখা করে আলোচনার মাধ্যমে সুষ্ঠু সমাধান চাইবো।
অবশেষে বিকাল ৫ টায় খনির প্রধান কার্যালয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেন জ্বালানি সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ও পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান মো. রেজানুর রহমান। ক্ষতিগ্রস্তদের ন্যায্য ও যৌক্তিক কথা শুনে তাদের আশ্বস্ত করেন জ্বালানি সচিব। এ সময় বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ফারজানা মমতাজ, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম, দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক মো. রফিকুল ইসলাম, কোলমাইনিং এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. সাইফুল ইসলাম সরকার সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রশাসনিক কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। জ্বালানি সচিব মো. সাইফুল ইসলাম বিষয়গুলো সুষ্ঠু সমাধানের জন্য জেলা প্রশাসক মো. রফিকুল ইসলামকে দায়িত্ব দেন। জেলা প্রশাসক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, অতি সত্বর আমি ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলো পায়ে হেটে দেখবো। আপনারা বৈষম্যের শিকার হবেন না, হতাশ হবেন না। আমরা আপনাদের পাশে আছি। আপনাদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করব।
উপদেষ্টা ড. সরকার মো.আবুল কালাম আজাদ। সম্পাদক : সরকার মো. আব্দুল মা'বুদ জীবন। প্রকাশক : মোছা. বর্না খাতুন। নির্বাহী সম্পাদক : টুটুল হুমায়ুন। ঠিকানা : বাড়ী, নীল অপরাজিতা, ২১৯/৪- ক দক্ষিণ পীরেরবাগ, আগারগাঁও ঢাকা, যোগাযোগ : +৮৮০১৮১৪৯৯০৫৪৬, ইমেইল : smjiboneditor@gmail.com
© All rights reserved © NagorikKontho