প্রিন্ট এর তারিখঃ এপ্রিল ২৬, ২০২৫, ৮:২৫ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ এপ্রিল ২৬, ২০২৫, ৯:২৩ এ.এম

পুলিশের চাকুরী মানেই সোনার হরিণ এ কথা মিল রাখলেন সিটিএসবির ইন্সপেক্টর এ এস এম সামছুদ্দিন। পতিত স্বৈরাচার সরকারের এক সময়ের প্রভাবশালী পুলিশ ইন্সপেক্টর এ এস এম সামছুদ্দিন আওয়ামী লীগের অন্যতম দোসর তৎকালীন সময়ে সরাসরি ছাত্রলীগের রাজনীতি করা, পুলিশ ইন্সপেক্টরের দায়িত্ব পালন করে অবৈধভাবে আয় করেছেন কোটি কোটি টাকা।রাজধানীর মিরপুর, ফার্মগেট, মাতুয়াইল সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় কিনেছেন নামে বেনামে ফ্লাট ও প্লট। সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, তিনি তার বেশিরভাগ সম্পত্তি কিনেছেন স্ত্রীর নামে, স্ত্রী পেশায় গৃহিনী হলেও তিনি এখন কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক ।
ঢাকার মিরপুরে পূর্ব মনিপুর হোল্ডিং -নম্বর ৭৭,এ বড় বাগ,মৌজা-সেনপাড়া পর্বতা,৪.৬১ শতাংশ জমি ক্রয় করেছেন তার স্ত্রী সাজিয়া আফরিন রুনার নামে, জমি ক্রয়ের অর্ধেক দামে দলিল করে, কয়েক লক্ষ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছেন বলে জানা গেছে। স্থানীয়দের মতে ওসির স্ত্রী পরিচয়ের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে একজন গৃহিণী হয়ে ও সাজিয়া আফরিন রুনা কি করে কয়েক কোটি টাকার জমি কিনলেন প্রশ্নও রাখেন এলাকাবাসী।
তবে আশে পাশে মহল্লার সবাই ওসি সাহেবের বাড়ি হিসেবে চেনেন। এদিকে বাড়ীটির স্থাপনা দুই তলা হলেও দলিলে দেখানো হয়েছে টিনশেড!
অনুসন্ধানে প্রতিবেদকের হাতে উক্ত বাড়ির দলিলটি আসার পর জানা যায়, (দলিল নং ৫৪৪৯) দাতা মরিয়ম বেগম শিরিন স্বামী মোঃ কামাল উদ্দিন, পিতার নাম -নাজিম উদ্দিন আহমেদ, মাতার নাম-জাহানারা বেগম, পেশায়-গৃহিণী । স্বামী কামাল উদ্দিনের মৃত্যুর পূর্বে ২১/০৪/২০১০ সালে ঢাকা সিটি জরিপে ৫৩১০ নং খতিয়ানে ৬.৪১ শতাংশ জমি মরিয়ম বেগম শিরিনের নামে মিরপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের রেজিস্ট্রিকৃত ৪৮৭৭ নম্বর হেবা বা হেবার ঘোষণাপত্র দলিল দ্বারা তিনি মালিক হন ।
তার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক প্রয়োজনে টাকার দরকার হলে গত ১১/০৭/২০১৯ সালে সাজিয়া আফরিন রুনা, স্বামী এ,এস,এম সামছুদ্দিন (বর্তমানে সিটি এসবি মিরপুর থানার ইন্সপেক্টর হিসেবে কর্মরত )পিতার নাম-আমিনুল হক ভূঁঞা , মাতার নাম-সালেহা খানম, পেশা-গৃহিনী বর্তমান ঠিকানা-১০৩০ পূর্ব মনিপুর, ফ্ল্যাট নাম্বার '৩-এ' কাঠালতলা, (স্ত্রীর নামে কেনা ফ্লাট সেভেন আপ গলি) মিরপুর ঢাকা-১২১৬ এর নিকট ঢাকার উত্তর সিটি কর্পোরেশনের, ১৩ নম্বর ওয়ার্ড এর,সেনপাড়া পর্বতা মৌজার খতিয়ান নম্বর -সি,এস-২৫৮ এস,এ-২৮২,আর,এস-২৬৯২/১, ঢাকা সিটি জরিপে -৫৩১০তফসিল বর্ণিত জমির মুল্য ৯৭ লক্ষ ৫ হাজার টাকা ও টিনশেড ঘরের মূল্য ৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা এবং মোট মূল্য ১ কোটি ১ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে ।
জমির দাতা ও একাধিক উপস্থিত সাক্ষীদের মাধ্যমে জানা যায়,জমি বিক্রি করা হয়েছে ২ কোটি ১৩ লক্ষ টাকা,দলিলে টিনশেড লেখা থাকলেও সেখানে আছে দুই তলা পাকা বাড়ি।

আয়কর অফিস সূত্রে জানা যায়, ওসি এ এস এম শামসুদ্দিন ২৪-২৫ অর্থবছরে তার আয় দেখিয়েছেন বাৎসরিক ১০ লক্ষ ১০ হাজার টাকা,এবং তার স্ত্রী আয় দেখিয়েছেন বাৎসরিক সাড়ে তিন লক্ষ টাকা।স্ত্রীর ৩.৫ লক্ষ টাকা আয় দেখিয়ে ও কিনেছেন তার নামে কোটি কোটি টাকার জমি,প্লট ও ফ্লাট ।
বর্তমান যে দুই তলা বাড়িটি তিনি ক্রয় করেছেন সেই বাড়িতে সব মিলিয়ে ২৮টি রুম রয়েছে। রুমের ভাড়া ছয় থেকে সাড়ে ছয় হাজার টাকা করে, সেই হিসেবে শুধুমাত্র একটা বাড়ি থেকেই তার প্রত্যেক মাসে ভাড়া উঠে এক লক্ষ সত্তর হাজার টাকা । যেটা বাৎসরিক হিসেবে আসে বিশ লক্ষ চল্লিশ হাজার টাকা । রাজস্ব ফাঁকি দিতেই তিনি দুই কোটি তের লক্ষ টাকার জমি দলিলে দেখিয়েছেন এক কোটি এক লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা, শুধু একটি বাড়ি থেকে আয় আসে, বাৎসরিক বিশ লক্ষ চল্লিশ হাজার টাকা অথচ তথ্য গোপন করে বাৎসরিক আয় দেখিয়েছেন সাড়ে তিন লক্ষ টাকা ।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে এ এস এম সামছুদ্দিন কে বারবার ফোন করলেও তিনি মুঠোফোনটি রিসিভ করেননি,এমনকি হোয়াটসঅ্যাপে বক্তব্যের জন্য মেসেজ দিলেও তিনি কোন উত্তর দেননি ।