গাজীপুরের কোনাবাড়ী ভূমি অফিসে গেলেই প্রথমেই চোখে পড়ে দালাল রোমানের দাপট। যেনো তিনি অফিসের অনুমোদিত কর্মচারী-এমন ভাব করে নাগরিকদের সামনে দাঁড়ান, কথা বলেন নির্দেশের ভঙ্গিতে। সাধারণ মানুষ সরাসরি কোনো অফিসার বা কর্মকর্তার কাছে যেতে চাইলে রোমানই প্রথম বাধা হয়ে দাঁড়ান। “ওভাই, স্যার ব্যস্ত, আপনার কাজ আমাদের দিয়ে করান”—এই কথাই তার মুখের বুলি।
যে বিষয়টি আরও উদ্বেগজনক, অফিসের ভেতরেও তার প্রভাব স্পষ্ট। করিডোর, লবি, অফিস কক্ষের সামনে রোমানের উপস্থিতি এমনভাবে দেখা যায় যে মনে হয় তিনি নিয়মিত স্টাফ। অনেক সেবা প্রত্যাশীর অভিযোগ—রোমান ও তার আশপাশে থাকা কিছু দালাল আগে থেকেই বুঝে ফেলে কোন নাগরিক কী কাজে এসেছে। এরপর তাদের আলাদা করে নিয়ে যায়, ফাইল দেখার অজুহাতে কাগজপত্র ছিনিয়ে নেয়, এবং মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে।
একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান—রোমান দীর্ঘদিন ধরে ভূমি অফিসে এক ধরনের অঘোষিত আধিপত্য কায়েম করে রেখেছে। “আমরা সরাসরি জনগণকে সেবা দিতে গেলে ওরা নানা অজুহাতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। অনেক সময় আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিতেও দ্বিধা করে না। ফলে অনেক কর্মচারীই ওদের সঙ্গে সরাসরি বিরোধে যেতে ভয় পান।”
এক ভুক্তভোগী জানান, তিনি ৪ শতক ৮০ পয়েন্ট জমির খারিজ করতে গেলে রোমান নিজেকে অফিসের স্টাফ পরিচয় দিয়ে কাগজপত্র নিয়ে নেন এবং বলেন—“সব কাজ আমি করে দেব।” পরে তিনি রোমানকে ১৩ হাজার টাকা দেন। পরে জানতে পারেন, এ কাজের সরকারি খরচ মাত্র ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা। প্রতারণার শিকার ওই ব্যক্তি বলেন, “যখন আমি সরাসরি অফিসার স্যারের কাছে যেতে চেয়েছিলাম, রোমান আমাকে ধমক দিয়ে সরিয়ে দেয়। দেখে মনে হয়েছে স্যারও এসব বলার মতো অবস্থায় নেই।”
অভিযোগ রয়েছে, রোমান একা নয়—তার পেছনে রয়েছে একটি ছোট কিন্তু প্রভাবশালী দালালচক্র। তারা অফিসের ভেতরের তথ্য, ফাইলের অগ্রগতি, কোন কাগজ কোথায় যাচ্ছে—এসব বিষয়ে অস্বাভাবিক রকম জ্ঞান রাখে। এই সুবিধা ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের কাজকে জিম্মি করে রাখে।
একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা স্বীকার করেন, “দালালদের বিরুদ্ধে অভিযান মাঝে মাঝে হয়, কিন্তু রোমানরা কয়েকদিন পর আবার ফিরে আসে। স্থায়ী ব্যবস্থা না নিলে এই সমস্যা যাবে না।”
সেবা প্রত্যাশীরা বলছেন—একজন রোমানের মতো দালাল দিনের পর দিন কীভাবে একটি সরকারি অফিসের সামনে-ভেতরে এমন প্রভাব দেখায়, সেটাই বড় প্রশ্ন। সাধারণ মানুষ মনে করছেন, রোমানের মতো দালালদের দৌরাত্ম্য বন্ধ না করলে, ভূমি অফিসে সেবা নেওয়া আরও কঠিন হয়ে পড়বে।
উপদেষ্টা ড. সরকার মো.আবুল কালাম আজাদ। সম্পাদক : সরকার মো. আব্দুল মা'বুদ জীবন। প্রকাশক : মোছা. বর্না খাতুন। নির্বাহী সম্পাদক : টুটুল হুমায়ুন। ঠিকানা : বাড়ী, নীল অপরাজিতা, ২১৯/৪- ক দক্ষিণ পীরেরবাগ, আগারগাঁও ঢাকা, যোগাযোগ : +৮৮০১৮১৪৯৯০৫৪৬, ইমেইল : smjiboneditor@gmail.com
© All rights reserved © NagorikKontho