সংবাদ শিরোনাম
একাধিক বার সংবাদ প্রকাশের পরও বহাল তবিয়তে সিভিল সার্জন ডা: হাদী জিয়াউদ্দিন

এস এম জীবন

একাধিক বার সংবাদ প্রকাশের পরও বহাল তবিয়তে সিভিল সার্জন ডা: হাদী জিয়াউদ্দিন। অনিয়মে যেন নিয়মে পরিণত করেছেন চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন ডা: হাদী জিয়াউদ্দিন আহমেদ। ক্ষমতার অপব্যবহার করে যখন যা ইচ্ছে তাই করছেন মন চাইলেই কোন ক্লিনিক অনুমোদন এবং বন্ধ করছেন।কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণেই থমকে আছে তদন্ত কার্যক্রম।
অভিযোগের যেন অন্ত নেই চুয়াডাঙ্গা জেলার সিভিল সার্জন ডাক্তার হাদি জিয়াউদ্দিন আহমেদের নামে।অনিয়ম কে যেন নিয়মে পরিণত করে কোন এক অদৃশ্য শক্তির বলে এখনো বহাল তবিয়তে আছেন ডাক্তার হাদি জিয়াউদ্দিন আহমেদ।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিধি মোতাবেক সিভিল সার্জন পদে পদায়নের বিধান না থাকলেও কোন এক অদৃশ্য শক্তির দাপটে নিজ জেলা চুয়াডাঙ্গায় দীর্ঘদিন ধরে চাকুরী করে আসছেন। আত্মীয়করণ, স্বজনপ্রীতি, নিয়োগ বাণিজ্য, ক্লিনিক বাণিজ্য,কোথাও থেমে নেই তার আধিপত্য বিস্তারে। তার কাছে অনিয়মে যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। নিজের পরিবারের ভিতরে অনেক লোককে আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরী,শাশুড়ির নামে ক্লিনিক এবং টাকার বিনিময়ে ভুয়া ক্লিনিক তৈরিতে সহায়তা আবার তার মন মত না হলে ভ্রাম্যমান আদালতে ক্লিনিকে দ্বন্দ্ববিধে দিয়ে বন্ধ করা এবং মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে খুলে দেওয়া ব্যবসায় পরিণত করেছেন তিনি এ যেন তুঘলঘি কান্ড। ঘটনাটি ঘটছে চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন ডাঃ হাদী জিয়া উদ্দিন আহমেদের ক্ষেত্রে।
সূত্রমতে, চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলাধীন এলাকাতে বর্তমান সিভিল সার্জন ডাঃ হাদী জিয়াউদ্দিন আহমেদের বিধি বহির্ভূত পদায়নের ক্ষেত্রে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পরও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আইনগত ভূমিকা নেয়ার ক্ষেত্রে রহস্যজনক ও উদাসীনতার অভিযোগ পাওয়া যায়।
বর্তমান সিভিল সার্জন হিসেবে কর্মরত আছেন নিজ জেলা চুয়াডাঙ্গাতে ডাঃ হাদী জিয়াউদ্দিন আহমেদ। এই বিষয়ে বিধি না থাকায় গত ২৭/০৪/২৫ তাং এ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের হয় ও তারএ পুর্বে গত ২০/০৩/২৫ তাং এ স্বাস্থ্য সচিব বরাবর অভিযোগ থাকলে দীর্ঘ কালক্ষেপনের অজানা এবং রহস্যজনক ভূমিকা পাওয়া যায় বর্তমান সিভিল সার্জন ডাঃ হাদী জিয়াউদ্দিনের বিরুদ্ধে।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, স্বাস্হ্য বিভাগের নীতিমালা ২০১৬ এর সিভিল সার্জন পদায়নের ক্ষেত্রে নিজ জেলা পরিহারের বিধান স্পষ্টত উল্লেখ থাকলেও তা বর্তমান সিভিল সার্জন ডাঃ হাদী জিয়া উদ্দিন আহমেদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হচ্ছে বলে জানা যায়। তথ্য অনুসন্ধানে আর জানা যায়, সিভিল সার্জন চুয়াডাঙ্গা জেলারই একজন বাসিন্দা। ডাঃ হাদী জিয়াউদ্দিন আহমেদ আলমডাঙ্গা থানাধীন উদয়পুর গ্রামের মৃতঃ আহমেদ আলীর সন্তান। বর্তমান স্টেশন পাড়া আলমডাঙ্গার নিজ বাড়িতে বসবাস করেন। তার স্ত্রী ডাঃ শারমিন আক্তার আলমডাঙ্গা থানাধীন যাদবপুর গ্রামের মৃতঃ আবু সাঈদের কন্যা। বর্তমান আলমডাঙ্গা স্বাস্হ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্হ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা হিসাবে কর্মরত আছেন। এক্ষেত্রে প্রকৃত বিধি মোতাবেক সিভিল সার্জন নিজ জেলাতে বহাল থাকার কোন বিধান না থাকলেও বর্তমান সিভিল সাধনের ক্ষেত্রে আইনে কোন প্রভাব ফেলছে না বলে জানা যায়। বিধি বহিরভূত ও বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে বিভিন্ন টেলিভিশন ও একাধিক জাতীয় প্রিন্ট মিডিয়াতে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলো কর্তৃপক্ষের টনক নড়ছেনা।
নিজ জেলাতে তাহার ডক্টরস কেয়ার নামে একটি প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার আছে। গত২০২২ সালে আলমডাঙ্গা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা থাকা অবস্থায় দালাল মাধ্যমে নিজ ক্লিনিকে রোগী ভাগিয়ে নেওয়া ও বিভিন্ন অনিয়ম বিষয়ে তার বিরুদ্ধে যমুনা টেলিভিশনের একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এছাড়া দ্যা নিউজ টোয়িন্টিফোর ডটকমে ২০২৪ সালে ৯ ই মার্চ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক থাকা অবস্থায় স্বাস্থ্য সেবা পার-২ শাখার যুগ্ম সচিব মন্জুরুল হাফিজ স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে ওএসডি করা হয়। সেই প্রতিবেদনেও অবৈধ হাসপাতাল পরিচালনার অভিযোগ উঠে। ডক্টরস কেয়ার এন্ড স্পেসালাইস্ট হাসপাতালটি ডাক্তার দম্পতি পরিচালনা করেন। ডাঃ হাদী জিয়াউদ্দিন আহমেদ আলমডাঙ্গা স্বাস্হ্য কমপ্লেক্সে উপজেলা স্বাস্হ্য ও পঃ পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে গত ৯/৯/২৪ তারিখে প্রথম প্রমোশন পেয়ে ম্যাটসে অধ্যক্ষ হিসেবে পদোন্নতি পান।
তার এক মাস পর ৯/১০/২৪ তারিখে সিভিল সার্জন হিসেবে ঝিনাইদহতে পদোন্নয়ন পান। শেষ ২৫/১২/২৪ তারিখে বদলী হয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলায় সিভিল সার্জন হিসেবে যোগদান করেন।
ডাঃ হাদী জিয়াউদ্দিন আহমেদ পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের একজন একনিষ্ঠ কর্মী বলে অভিযোগ রয়েছে। তার কর্মজীবনে তিনি অত্যন্ত চতুরতার সহিত ক্ষমতাসীন দলের সহিত সখ্যতা রাখেন বলে যায়। তার অন্যতম বাস্তব উদাহরণ হিসেবে বিগত সরকারের শাসনামলেও স্থানীয় সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দার সেলুনের সহিত তার পরিবারসহ ফুলের শুভেচ্ছা বিনিময় এবং নিয়মিত যাতায়াতের বিষয়ে জনমনে প্রশ্ন। তবে ভোল পাল্টে হঠাৎ জামায়তে ইসলাম মনা হওয়ার চেষ্টা করছে। অনেকের ধারণা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে তার স্ত্রীকে কর্মস্থল আলমডাঙ্গা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্য ও পঃপঃ কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োগ নিয়েছেন। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে ঠিক পরিবারতন্ত্র হিসাবে নিজে সিভিল সার্জন এবং স্ত্রী ডাঃ শারমিন আক্তার আলমডাঙ্গা হারদীতে স্বাস্থ্য ও পঃপঃ কর্মকর্তা হিসাবে কর্মরত আছেন। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক( প্রশাসন) ডাঃ রিজওয়ানুর রহমানের মতামত জানতে চাইলে তিনিও বলেন, বিধি মোতাবেক নিজ জেলাতে সিভিল সার্জনের থাকার কোন সুযোগ নেই,তবে তথ্য বিষয়ে অবগত করলে ব্যবস্হা নেওয়া হবে।
এদিকে, তার স্ত্রী শারমিন আক্তার চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার স্থায়ী বাসিন্দা হওয়া স্বত্তেও নানারকম কায়দা কৌশল করে আলমডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে দাপুটের সাথে কর্মরত আছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নীতিমালা অনুযায়ী একজন সিভিল সার্জনের নিজ এলাকায় দায়িত্ব পালনের সুযোগ নেই। কিন্ত সেই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন চুয়াডাঙ্গা জেলার বর্তমান সিভিল সার্জন ডা. হাদী জিয়াউদ্দিন আহমেদ। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রশাসন ডাঃ রিজওয়ানুর রহমান বলেন, বিধি মোতাবেক নিজ জেলাতে একজন সিভিল সার্জন পদে থাকতে পারে না,এই বিষয়ে কোন অনিয়ম আপনাদের মাধ্যমে দৃষ্টিগোচর হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্হা নেওয়া হবে।
অতি মুনাফালোভী এই ডা. দম্পতির রয়েছে নামে-বেনামে বিপুল পরিমান সম্পদ। পেশায় চিকিৎসক হওয়ার সুবাধে আয়েশা পার্ক নামে গড়ে তুলেছেন আটতলা বিশিষ্ট বহুতল ভবন যেখানে রয়েছে তাদের নিজেদের মালিকানায় পরিচালিত ডক্টরস কেয়ার নামে একটি হাসপাতাল । তবে কাগজে কলমে মালিকানা দেখানো হয়েছে বিভিন্নজনের নামে। সরকারী চাকরিজীবী হওয়ায় বহুতল ভাবনটির কাগজে কলমে মালিকানায় রয়েছেন ডাক্তারের শাশুড়ী মালিহা আক্তার পলি। তার নামেই ভবনটির নাম দেয়া হয়েছে আয়েশা পার্ক।
এই বিষয়ে স্বাস্হ্য সচিব ও স্বাস্হ অধিদপ্তর বরাবর একাধিক জাতীয় পত্রিকায় একাধিকবার প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও আইনগত পদক্ষেপের কোন দৃষ্টান্ত না পাওয়ায় বিশিষ্টজনরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে দায়ী করছেন।
ট্যাগস :