মুক্তিযুদ্ধের না বলা কথা সম্ভ্রমযোদ্ধাদের মর্মস্পর্শী গাঁথা গ্রন্থ আলোচনা
মাসউদ রানা
বর্ণাঢ্য আয়োজনে দিনাজপুর প্রেসক্লাবে সম্ভ্রমযোদ্ধা: সেবাসদন ও একজন ডা. হালিদা নামক গন্থের গ্রন্থ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
কবি, সাহিত্যিক, লেখক, গবেষক, ইতিহাসবিশারদ, শিক্ষাবিদসহ বরেণ্য জনের উপস্থিতিতে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ফেলো নারী অগ্রগতি ও স্বেচ্ছাসেবী আন্দোলনের পথিকৃৎ, আন্তর্জাতিক নারী প্রজনন ও স্বাস্থ্য গবেষক, বাংলা একাডেমি সাম্মানিক ফেলোশীপ ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ‘বেগম রোকেয়া পদক’ এ ভূষিত ডা. হালিদা হানুম আখতারের রচিত গ্রন্থের আলোচনা অনুষ্ঠান যেন রূপ নেয় বিদগ্ধজনের এক মিলন মেলায়।
গ্রন্থটিতে একত্তরের বর্বর হানাদারবাহীনি কতৃর্ক অত্যাচারিত সম্ভ্রমহারানো গর্ভবতীর্ নারীদের একমাত্র চিকিৎসাসেবা ও পূনর্বাসনকেন্দ্র ধানমন্ডির ‘সেবাসদন’ এ বিভিন্ন জেলা থেকে আসা বিরঙ্গনাদের মানসিকউন্নয়ন ও চিকিৎসাসেবার মর্মস্পর্শী বেদনাময় প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার স্মৃতি রোমন্থন করেছেন তিনি। তাদের কষ্টের কণ্ঠকমালা গাঁথতে চেয়েছেন তা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের দলিল হয়ে থাকবে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে। বুধবার (১২ জুন) সন্ধ্যায় দিনাজপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সিডিএ আয়োজিত ডক্টর ডা. হালিদা হানুম রচিত সম্ভ্রমযোদ্ধা: সেবাসদন ও একজন ডা. হালিদা নামক গ্রন্থ আলোচনায় এমন মন্তব্য করেন আলোচকবৃন্দ। আলোচকবৃন্দ বলেন, বহুমাত্রিক ইতিহাস আছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের পিছনে। এ গ্রন্থ থেকে প্রমাণ হলো এখনো মুক্তিযুদ্ধের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস আমরা তুলে আনতে পারিনি। মুক্তিযুদ্ধের অনেক প্রেক্ষিত লুকিয়ে আছে এভাবে বের করে আনতে হবে। ডা. হালিদা বলেন, জীবনের অগণিত প্রাপ্তির মাঝে ‘সেবাসদন’ এ কাজ করার তৃপ্তিকেই আজ জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন বলে মনে হয়। ডা. হালিদা সম্পর্কে বক্তারা বলেন, ডা. হালিদা এক আদর্শ ও অনুপ্রেরনার নাম। তিনি আমেরিকায় স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রির পর জনস্বাস্থ্যে মাস্টার্স ও ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি বিবেকের তাড়নায় দেশে ফিরে একাত্তর পরবতীর্ সেবাসদনে পূর্নবাসীত নারীদের চিকিৎসা সেবার দায়ভার গ্রহণ করেন। বর্তমানে ডা. হালিদা জাতিসংঘে নারী স্বাস্থ্য বিষয়ে প্রতিনিধিত্ব করছেন। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আই এফএম শহীদুল ইসলাম খাঁনের সভাপতিত্বে ও সিডিএ’র নির্বাহী পরিচালক গুণিজন শাহ্ ই মবিন জিননাহ্’র সঞ্চালনায় আয়োজিত গ্রন্থ আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন হাবিপ্রবির সাবেক উপাচার্য কৃষিবিদ প্রফেসর মো. রুহুল আমীন চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বাংলাদেশ প্রাণীবিদ্যা সমিতির সভাপতি ডক্টর হামিদা খানম ও সদর উপজেলার চেয়ারম্যান ইমদাদ সরকার। গ্রন্থ আলোচক ছিলেন এম. আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও এনাটমী বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. কান্তা রায়, সিটি কলেজের অধ্যক্ষ লেখক ও গবেষক অধ্যাপক মোজাম্মেল বিশ্বাস , সঙ্গীত কলেজের উপাধ্যক্ষ লেখক ডক্টর মারুফা বেগম, দিনাজপুর সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের প্রধান সহকারী অধ্যাপক আলী ছায়েদ। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য প্রদান করেন, কেবিএম কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সাইফুদ্দিন আখতার, চিকিৎসা অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক ও শহীদ আসাদুল্লাহ্ স্মৃতি সংসদের সভাপতি ডা. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্, সাবেক যুগ্মসচিব ও লেখক এমএ কাফি সরকার, দৈনিক উত্তর বাংলার নির্বাহী সম্পাদক জিনাত রহমান প্রমূখ। আলোচনা শেষে দিনাজপুর সিডিএ’র পক্ষ থেকে ডা. হালিদা’কে সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়।