ঢাকা ০৫:১২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৫, ১৩ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
রাজবাড়ীতে অভিমান করে তরুণীর আত্মহত্যা লোহাগড়া বাজারে সরকারি সড়ক দখল করে তিনতলা ভবন নির্মাণ, চরম দুর্ভোগে পথচারীরা হতদরিদ্র শাহিনুর বেগমকে ঘর উপহার দিলেন- দেশ নায়ক তারেক রহমান একাত্তরের অমীমাংসিত বিষয়ে দুইবার সমাধান হয়েছে দাবি করেছেন -ইসহাক দার জনগণের ইচ্ছাতেই দায়িত্বভার গ্রহণ করেছি, কোন ইচ্ছা নেই সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে প্রবেশের -প্রধান উপদেষ্টা  কালুখালীতে বাস-ট্রাক মুখোমুখি সংঘর্ষে আহত ২২ কোনো ষড়যন্ত্রেই কাজে আসবেনা যদি জনগন নির্বাচনমূখী হয়- স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা রাজবাড়ী পাংশাতে “Digital Skills Training for Students” কর্মসূচির সমাপনী অনুষ্ঠান পাঁচশত কোটি টাকা নিয়ে বিদেশে পলাতক পুষ্পধারার পরিচালক মাইনউদ্দিন র‍্যাব ৭ একটি আভিযানিক দলের অভিযানে পৃথক তিন মামলার ৩ আসামি প্রেফতার

অবশেষে কাজী নজরুল ইসলামকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আতাউর রহমান স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, গত ডিসেম্বরে উপদেষ্টা পরিষদের এক সভায় অনুমোদিত প্রস্তাব অনুযায়ী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশের জাতীয় কবি ঘোষণা করা হয়েছে এবং এটি সকলের অবগতির জন্য গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ৫ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবি ঘোষণা করে গেজেট প্রজ্ঞাপন প্রকাশের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়।

কবি কাজী নজরুল ইসলামের জাতীয় কবির মর্যাদার বিষয়টি ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠিত সত্য এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও স্বীকৃত। বাংলাদেশের জনগণ তাকে তার ঢাকায় আগমনের তারিখ থেকে জাতীয় কবি ঘোষণা করে সরকারি প্রজ্ঞাপন প্রত্যাশা করে আসছিল। উপদেষ্টা পরিষদ এ প্রত্যাশা অনুযায়ী এ প্রস্তাব অনুমোদন করে।

কবি কাজী নজরুল ইসলামকে ১৯৭২ সালের ২৪ মে কলকাতা থেকে সরকারি উদ্যোগে সপরিবারে ঢাকায় আনা হয় এবং তার বসবাসের জন্য ধানমন্ডির ২৮ নম্বর (পুরাতন) সড়কের ৩৩০-বি বাড়িটি বরাদ্দ প্রদান করা হয়।

এরপর ১৯৭৬ সালের জানুয়ারি বাংলাদেশ সরকার কবিকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করে। একই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি তাকে একুশে পদকে ভূষিত করা হয়। একুশে পদক বাংলাদেশের দ্বিতীয় বেসামরিক সম্মানসূচক পদক হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে।

১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাংলা সাহিত্য এবং সংস্কৃতিতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে কাজী নজরুল ইসলামকে সম্মানসূচক ডি.লিট উপাধি প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ১৯৭৪ সালের ৯ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক মিলনায়তনে (টিএসসি) এক সমাবর্তন উৎসবে এই উপাধি প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। অসুস্থতার জন্য নজরুলকে এ উৎসবে আনা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীকালে ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি তারিখে বঙ্গভবনে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদউল্লাহ নজরুলকে ডি. লিট উপাধিতে ভূষিত করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল মতিন চৌধুরী নজরুলের উদ্দেশে একটি মানপত্রও পাঠ করেন।

কবি নজরুল ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট ইন্তেকাল করেন। নজরুল তার একটি গানে লিখেছেন, ‘মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিও ভাই, যেন গোরে থেকেও মুয়াজ্জিনের আজান শুনতে পাই’। এই ইচ্ছার প্রতি সম্মান জানিয়ে কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়।

তার জানাজায় ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ শরিক হন। জানাজার পর রাষ্ট্রপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম, মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান, রিয়াল এডমিরাল এম এইচ খান, এয়ার ভাইস মার্শাল এ জি মাহমুদ, মেজর জেনারেল দস্তগীর জাতীয় পতাকা-মোড়ানো নজরুলের মরদেহ বহন করে সোহরাওয়ার্দী ময়দান থেকে বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদ প্রাঙ্গণে নিয়ে যান। বাংলাদেশে তার মৃত্যু উপলক্ষে দুই দিনের রাষ্ট্রীয় শোক দিবস পালিত হয়।

পরবর্তীকালে তাকে জাতীয় কবি হিসেবে সম্বোধন করে কবি নজরুল ইনস্টিটিউট আইন, ২০১৮ জারি করা হয়।

১৯২৯ সালের ১০ ডিসেম্বর অবিভক্ত ভারতের কলকাতার এলবার্ট হলে সমগ্র বাঙালি জাতির পক্ষ থেকে নেতাজী সুবাস চন্দ্র বসু, বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, এস, ওয়াজেদ আলী, দীনেশ চন্দ্র দাশসহ বহু বরণ্যে ব্যক্তিত্বের উপস্থিতিতে কবি কাজী নজরুল ইসলামকে ‘জাতীয় কাণ্ডারী’ এবং ‘জাতীয় কবি’ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়।

পরবর্তীকালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীন বাংলাদেশে কবির জন্ম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে প্রদত্ত বাণীতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান উপদেষ্টাগণও কবিকে ‘জাতীয় কবি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। কিন্তু সর্বক্ষেত্রে বাংলাদেশের জাতীয় কবি হিসেবে স্বীকৃত হলেও কবি কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবি হিসেবে ঘোষণা করে ইতোপূর্বে সরকারিভাবে কোনো গেজেট প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি।

ট্যাগস :
আপডেট সময় ০৩:৩৫:০৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩ জানুয়ারী ২০২৫
৯৩ বার পড়া হয়েছে

অবশেষে কাজী নজরুল ইসলামকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান

আপডেট সময় ০৩:৩৫:০৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩ জানুয়ারী ২০২৫

রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আতাউর রহমান স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, গত ডিসেম্বরে উপদেষ্টা পরিষদের এক সভায় অনুমোদিত প্রস্তাব অনুযায়ী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশের জাতীয় কবি ঘোষণা করা হয়েছে এবং এটি সকলের অবগতির জন্য গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ৫ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবি ঘোষণা করে গেজেট প্রজ্ঞাপন প্রকাশের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়।

কবি কাজী নজরুল ইসলামের জাতীয় কবির মর্যাদার বিষয়টি ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠিত সত্য এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও স্বীকৃত। বাংলাদেশের জনগণ তাকে তার ঢাকায় আগমনের তারিখ থেকে জাতীয় কবি ঘোষণা করে সরকারি প্রজ্ঞাপন প্রত্যাশা করে আসছিল। উপদেষ্টা পরিষদ এ প্রত্যাশা অনুযায়ী এ প্রস্তাব অনুমোদন করে।

কবি কাজী নজরুল ইসলামকে ১৯৭২ সালের ২৪ মে কলকাতা থেকে সরকারি উদ্যোগে সপরিবারে ঢাকায় আনা হয় এবং তার বসবাসের জন্য ধানমন্ডির ২৮ নম্বর (পুরাতন) সড়কের ৩৩০-বি বাড়িটি বরাদ্দ প্রদান করা হয়।

এরপর ১৯৭৬ সালের জানুয়ারি বাংলাদেশ সরকার কবিকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করে। একই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি তাকে একুশে পদকে ভূষিত করা হয়। একুশে পদক বাংলাদেশের দ্বিতীয় বেসামরিক সম্মানসূচক পদক হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে।

১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাংলা সাহিত্য এবং সংস্কৃতিতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে কাজী নজরুল ইসলামকে সম্মানসূচক ডি.লিট উপাধি প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ১৯৭৪ সালের ৯ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক মিলনায়তনে (টিএসসি) এক সমাবর্তন উৎসবে এই উপাধি প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। অসুস্থতার জন্য নজরুলকে এ উৎসবে আনা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীকালে ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি তারিখে বঙ্গভবনে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদউল্লাহ নজরুলকে ডি. লিট উপাধিতে ভূষিত করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল মতিন চৌধুরী নজরুলের উদ্দেশে একটি মানপত্রও পাঠ করেন।

কবি নজরুল ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট ইন্তেকাল করেন। নজরুল তার একটি গানে লিখেছেন, ‘মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিও ভাই, যেন গোরে থেকেও মুয়াজ্জিনের আজান শুনতে পাই’। এই ইচ্ছার প্রতি সম্মান জানিয়ে কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়।

তার জানাজায় ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ শরিক হন। জানাজার পর রাষ্ট্রপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম, মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান, রিয়াল এডমিরাল এম এইচ খান, এয়ার ভাইস মার্শাল এ জি মাহমুদ, মেজর জেনারেল দস্তগীর জাতীয় পতাকা-মোড়ানো নজরুলের মরদেহ বহন করে সোহরাওয়ার্দী ময়দান থেকে বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদ প্রাঙ্গণে নিয়ে যান। বাংলাদেশে তার মৃত্যু উপলক্ষে দুই দিনের রাষ্ট্রীয় শোক দিবস পালিত হয়।

পরবর্তীকালে তাকে জাতীয় কবি হিসেবে সম্বোধন করে কবি নজরুল ইনস্টিটিউট আইন, ২০১৮ জারি করা হয়।

১৯২৯ সালের ১০ ডিসেম্বর অবিভক্ত ভারতের কলকাতার এলবার্ট হলে সমগ্র বাঙালি জাতির পক্ষ থেকে নেতাজী সুবাস চন্দ্র বসু, বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, এস, ওয়াজেদ আলী, দীনেশ চন্দ্র দাশসহ বহু বরণ্যে ব্যক্তিত্বের উপস্থিতিতে কবি কাজী নজরুল ইসলামকে ‘জাতীয় কাণ্ডারী’ এবং ‘জাতীয় কবি’ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়।

পরবর্তীকালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীন বাংলাদেশে কবির জন্ম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে প্রদত্ত বাণীতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান উপদেষ্টাগণও কবিকে ‘জাতীয় কবি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। কিন্তু সর্বক্ষেত্রে বাংলাদেশের জাতীয় কবি হিসেবে স্বীকৃত হলেও কবি কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবি হিসেবে ঘোষণা করে ইতোপূর্বে সরকারিভাবে কোনো গেজেট প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি।