নারী পুরুষের যেসব কারনে ডায়েবেটিস হওয়ার লক্ষন বুঝতে পারবেন দেখা যায়


ডায়াবেটিস বিপাকজনিত রোগ, যেখানে রক্তের শর্করার পরিমাণ স্থায়ীভাবে বৃদ্ধি পায়। তাই ডায়াবেটিস হলে রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়তে শুরু করে, ফলে রোগীর স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। যে কোনো বয়সেই মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে পারেন। শরীরে ডায়াবেটিসের লক্ষণ প্রকাশ পেলে অবশ্যই পরীক্ষা জরুরি। তবে শরীরে ডায়াবেটিস বাসা বাঁধছে কিনা, তা অনেকেই বুঝতে পারেন না।
যদিও ডায়াবেটিসের অনেক লক্ষণ পুরুষ ও নারী উভয়ের ক্ষেত্রে একই। যেমন–ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার প্রবণতা, অনেক বেশি পিপাসা লাগা, ওজন কমে যাওয়া, বেশি ক্ষুধা লাগা, ঝাপসা দৃষ্টি বা প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া, ক্লান্তি ও দুর্বলতা অনুভব করা। এ ধরনের লক্ষণ সব রোগীদের মধ্যেই কমবেশি দেখা দেয়। তবে নারীদের হরমোন, মূত্রনালির সংক্রমণ, মাসিকের অনিয়ম, প্রজনন স্বাস্থ্যসহ কিছু কারণে ডায়াবেটিসের লক্ষণ ভিন্নভাবে দেখা দিতে পারে।নারীদের ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলি জানা থাকলে সময়মতো রোগ নির্ণয় করা সম্ভব। তা না হলে হৃদরোগ, কিডনি সমস্যাসহ দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই জটিলতা দূর করতে ডায়াবেটিসের প্রাথমিক লক্ষণগুলি সনাক্ত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেমন:
১.ঘন ঘন প্রস্রাব এবং অতিরিক্ত পিপাসা ডায়াবেটিসের প্রাথমিক লক্ষণগুলির মধ্যে একটি। যখন রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি থাকে, তখন শরীর অতিরিক্ত শর্করা প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করে, যার ফলে কিডনিতে বাড়তি চাপ পড়ে। এতে ঘন ঘন প্রস্রাব হয় এবং পিপাসা বাড়ে।
২. ওজন কমে যাওয়া ডায়াবেটিসের লক্ষণ। স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি খাবার খাওয়া সত্ত্বেও, ওজন কম গেলে বুঝতে হবে ডায়াবেটিসের লক্ষণ। ডায়াবেটিস হলে, ইনসুলিনের অভাবে পর্যাপ্ত পরিমাণে শর্করা ব্যবহার করতে পারে না। এর ফলে শরীর শক্তি উৎপাদনের জন্য পেশি এবং চর্বি ব্যবহার করে, যার কারণে ওজন কমে যেতে পারে।
৩. ক্রমাগত ক্লান্তি ডায়াবেটিসের লক্ষণ হতে পারে। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নারীদের মধ্যে ক্লান্তি একটি সাধারণ উপসর্গ, কারণ শরীরের কোষগুলি ইনসুলিনের অভাবে পর্যাপ্ত পরিমাণে শক্তি তৈরি করতে পারে না।
৪. ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নারীদের মূত্রনালির সংক্রমণ (ইউটিআই) হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। এর কারণ হলো ডায়াবেটিস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়, ফলে শরীরে বিভিন্ন সংক্রমণ সহজে বাসা বাঁধতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করার পরিমাণ বেশি থাকার কারণে মূত্রনালিতে ব্যাকটেরিয়া জন্মানোর পরিবেশ তৈরি হয়। যা মূত্রনালির সংক্রমণ (ইউটিআই)–এর ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দেয়।
৫. ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নারীদের ত্বকে চুলকানি ও বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ দেখা দিতে পারে। রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে গেলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়, যা চুলকানির অন্যতম কারণ। এছাড়া ডায়াবেটিসের কারণে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক দ্বারা ত্বক সহজে আক্রান্ত হতে পারে।
৬. ঝাপসা দৃষ্টি ডায়াবেটিসের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। যখন শর্করার মাত্রা ওঠানামা করে, তখন চোখের লেন্স ফুলে যেতে পারে। এর ফলে দৃষ্টিশক্তির পরিবর্তন হতে পারে। ডায়াবেটিস চোখের রেটিনার রক্তনালীগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, যা ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি নামে পরিচিত। এর কারণে দৃষ্টি ঝাপসা হতে পারে।
৭. ডায়াবেটিস হলে কাটা বা ক্ষতস্থান সহজেই শুকাতে চায় না। যখন শরীরে ইনসুলিনের অভাব হয়, তখন রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। এই কারণে কাটা বা ক্ষতস্থান সহজে শুকাতে চায় না।
৮. ডায়াবেটিসের কারণে নারীদের ত্বকের সমস্যা বা সংক্রমণ দেখা দিতে পারে। নারীদের ত্বকে চুলকানি, ফাংগাল সংক্রমণ, কালো দাগ পড়া ডায়াবেটিসের সাধারণ লক্ষণ হতে পারে।
৯. ডায়াবেটিসে কারণে মেজাজের পরিবর্তন, বিরক্তি, এমনকি বিষণ্ণতার মতো লক্ষণও দেখা দিতে পারে। এতে নারীরা উদ্বেগ অনুভব করতে পারেন।
১০. ডায়াবেটিসের কারণে অনিয়মিত মাসিক বা হরমোনের সমস্যা হতে পারে। ইনসুলিন প্রতিরোধের ফলে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। এর ফলে অনিয়মিত মাসিক, গর্ভধারণে অসুবিধা অথবা PCOS (পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম) এর লক্ষণগুলি আরও প্রকট হতে পারে।