শ্রীনগরে ধরা ছোঁয়ার বাইরে স্বৈরাচারের শীর্ষ অপরাধী ইকবাল মাষ্টার


মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার বাড়ৈখালী ইউনিয়ন পরিষদের পর পর দু বারের চেয়ারম্যান এবং বাড়ৈখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ ইকবাল হোসেন মাষ্টারের বিরুদ্ধে অত্যাচার,নির্যাতন, মিথ্যা মামলা, নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে হামলা মাদক ব্যবসা, সরকারি খাস জমি দখল,আড়িয়াল বিলের মাটি লুট, সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ, পুলিশ পিটিয়ে হত্যা করাসহ শত শত অভিযোগ পাওয়া গেছে ।বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতা আন্দোলনে ছাত্রদের বাঁধা দেওয়াসহ তাদের গ্রেফতার করতে মরিয়া হয়ে উঠেন ইকবাল ও তার বাহিনী। ছাত্রদের তালিকা করে তাদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে এমন কি মোবাইল ফোনে চলে হুমকি। গোপন সূত্র জানায়,ছাত্রদের দমন করতে আগ্নেয়াস্ত্র পর্দশন করেন ইকবাল বাহিনী। স্বৈরাচার সরকারের পতনের পরও নিজের অবস্থান টিকিয়ে রাখতে তার ভাই মামুন এবং দালাল আসলাম কে দিয়ে বিএনপি নেতা কর্মীদের ওপর হামলা করান।
ইতোমধ্যে কথিত শিক্ষক, মুক্তিযুদ্ধা ইকবাল হোসেন এর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী পরিবার গুলো। তাদের অভিযোগ স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের পতনের পর বাড়ৈখালী তে লাশের রাজনীতি করার চেষ্টা করেন স্বৈরাচার ইকবাল হোসেন মাষ্টার, কিন্তু গণজনতার আন্দোলনের ভয়ে পালিয়ে থেকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পায়তারা করে যাচ্ছেন,দ্রুত তাকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি সকল মহলের। অনুসন্ধানে তার অপরাধ কর্মের ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। জানা যায়, স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময় বাড়ৈখালী তে বসবাস শুরু করে তার পরিবার, তার পূর্ব বসতি সম্পর্কে শত-শত লোকজনের নিকট জানতে চাওয়া হলেও কারও নিকট হতে কিছু জানা যায়নি নাই। নিজেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিয়ে বেড়ালেও এলাকার প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা তার সম্পর্কে তেমন কিছুই জানেন না।উচ্চ মাধ্যমিকের গন্ডি পার না হওয়া ইকবাল প্রথম জীবনে প্রবাসে পার করলেও দেশে ফিরে শুরু করেন শিক্ষকতা।
চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে বিগত ১/১১ সরকারের আমলে অতিরিক্ত সুযোগে দীর্ঘ দিন পরিষদের দায়িত্বে বহাল থেকেও নির্বাচনে তার প্রতিবেশি সেলিম তালুকদারের নিকট পরাজিত হন। মুন্সিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক পদ ছেড়ে বাড়ৈখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের পদ গ্রহন করেন।ছিলেন জেলা পরিষদের মেম্বার এবং শ্রীনগর উপজেলা আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির সদস্য, ইউনিয়ন মুক্তিযুদ্ধা কমান্ডার। মূলত যত প্রকারের গুরুত্বপূর্ণ পদ আছে তার সব টি বাগিয়ে নিয়েছিলেন তিনি। আর এ সব পদ কে কাজে লাগিয়ে পুরো এলাকায় সন্ত্রাসী এবং মাদক ব্যবসায়ীদের রাম রাজত্ব কায়েম করেন।আড়িয়াল বিলের কোটি কোটি টাকার মাটি বিক্রি, বিলে ডাকাতি, চাঁদাবাজি এমন কি জমি দখল।
২০১১ সালে আড়িয়াল বিলে বিমানবন্দর নির্মাণ কে কেন্দ্র করে ইকবালের নেতৃত্বে পুলিশ পিটিয়ে হত্যা করে ৩ টি অস্ত্র ছিনিয়ে নেন সন্ত্রাসীরা, প্রশাসনের চাপে উক্ত আগ্নেয়াস্ত্র ফিরত প্রদান করেন ইকবাল মাষ্টার। শত -শত হত দরিদ্র অসহায় বিলবাসী হত্যা মামলার আসামি হলেও মাষ্টার মাইন্ড মাষ্টার মামলা হতে অব্যহতি পান।বিল রক্ষার নামে আড়িয়াল বিল রক্ষা কমিটি কে পাশ কাটিয়ে আপন মামাতো ভাই তারেক মামুন এর মাধ্যম বিলের মাটি লুট শুরু করেন।তার প্রভাবের কারনে কথা বলতে সাহস দেখাতেন না কেউ।মামুন বাহিনী কোটি কোটি টাকার মাটি লুট করে আঙুল ফুলে কলাগাছ।আড়িয়াল বিলের মাটি লুট এবং স্হানীয় শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীরা তার আস্থাভজন। বাড়ৈখালী বাজারে খাস ও ব্যক্তি মালিকানা জমি দখল করে নিয়ম বহিভূতভাবে আওয়ামী লীগ অফিস করার নামে তিন তলা ভবন করা ছাড়াও, বাজার সমিতির কমিটি ভেঙে দিয়ে দখল নেন নিজে।বাড়ৈখালী বাজারে অবস্থিত মুক্তিযোদ্ধা সংসদের অফিস টি দখলে নিয়ে ভাড়া প্রদান করেছেন তিনি। জেলা পরিষদ,ইউনিয়ন পরিষদসহ সকল কাজের টেন্ডার ইকবাল মাষ্টার নিজে এবং তার সহযোগী ২ নং ওয়ার্ড মেম্বার মোজাম্মেল হক সেন্টুর তত্ত্বাবধানে। আনাচে কানাচে সকল উন্নয়ন মূলক কাজের টেন্ডার উক্ত দুই ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারও জন্য ছিল অসম্ভব।কলেজ স্কুল সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একক আধিপত্য। তার পান্ডাদের দ্বারা নির্যাতিত মানুষের সংখ্যা শত- শত। নিজে মুক্তিযুদ্ধা সেজে বঞ্চিত ও হয়রানি করছেন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের।
কোন রকম ব্যবসা বানিজ্য চাকরি না থাকলেও নিজ বাড়িতে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করেছেন আলিশান ভবন।বাড়ৈখালী,শ্রীধরপুর এবং বিলে অন্যের জমি দখলে নিয়ে খাস জমিসহ বিক্রি করেছেন তিনি। জমি জমা বা পারিবারিক বিষয় নিয়ে হাতিয়ে নিতেন লাখ লাখ টাকা। পান থেকে চুন খসলে করা হত পুলিশি হয়রানি।স্বৈরাচার শাসনামলের পুরো সময় জুড়ে অত্র এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন কথিত শিক্ষক ইকবাল হোসেন। এমনকি বাড়ৈখালী ইউনিয়ন ১ নং ওয়ার্ড সরকারি পুকুর পাড় সংলগ্ন জেলা পরিষদের জমি নিজের বলে জাহির করেন।বিরোধী দলের অসংখ্য নেতার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে ঘর বাড়ি ছাড়া করাসহ হাট বাজারের ইজারা থেকে শুরু করে মাঠ ঘাট সবই যেন তার। শিবরামপুর হাটে তার নেতৃত্বে উত্তোলন হয় অতিরিক্ত চাঁদা যার প্রভাবে ঐতিহাসিক হাটটি হারিয়েছে আগের সে জৌলুস। কোরবানি তে গরুর হাটের একমাত্র ইজারাদার ছিলেন তিনি, তার ইচ্ছায় চলত হাট। এখনো এলাকায় অবৈধ মাটি ব্যবসা পরিচালনা করছেন তার পালিত বাহিনীর সদস্যরা।