ঢাকা ০৩:৫৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ২০ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
সিরাজদিখানে পুলিশের আস্কারায় বেপরোয়া মাদক দস্যু সিন্ডিকেট পাংশায় দোকানঘর ও ক্রয়কৃত পজিশন ফেরতের দাবিতে সাবেক রেলমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মানববন্ধন দখলবাজি ও চাঁদাবাজির অভিযোগে যুবদল নেতা নাইম হোসেন ও সোহাগ বহিষ্কার সিরাজদিখান যুবদল সদস্য সচিবের বিরুদ্ধে নানা অন্যায় অপকর্মের অভিযোগ ঢাকা থেকে ভোলাগামী কর্ণফুলী লঞ্চ থেকে সোহাগ নামে এক যাত্রী নিখোঁজ পাংশায় ৫৪তম জাতীয় সমবায় দিবস উদযাপন উল্লাপাড়ায় আকস্মিক ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টিপাতে আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি সবুজ অভিযানে বাংলাদেশ পেশাজীবী ফেডারেশন মৃত্যুঞ্জয়ী  ছাত্রনেতা রবিন খান: ত্যাগ, সাহস ও আদর্শের অগ্নিশপথে এক জীবন্ত ইতিহাস কালুখালীর সাওরাইলে এনডিএম মহাসচিব মোমিনুল আমিনের পথ সভা ও লিফলেট বিতরণ

বড়পুকুরিয়ায় বিস্ফোরক দূর্ঘটনায় শিশু শিক্ষার্থী ক্ষতবিক্ষত

মাসউদ রানা

দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং এর পাশে পরিত্যক্ত ডেটোনেটর (বিশেষ বিস্ফোরক ডিভাইস) বিস্ফোরণে এক শিশু শিক্ষার্থীর ডান হাতের কব্জি উড়ে যায়।

মঙ্গলবার (৮ জুলাই) দুপুর ১২টায় পার্বতীপুর উপজেলার বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি সংলগ্ন চৌহাটি গ্রামে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে ।
আহত শিশু ইলিয়াস (১০) চৌহাটি গ্রামের বাসিন্দা আশরাফুল ইসলামের ছেলে। সে চৌহাটি সালাফিয়া মাদ্রাসার নাজেরা বিভাগের শিক্ষার্থী ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার (৮ জুলাই) দুপুর ১২টার দিকে কয়লাখনি এলাকার ডাম্পিং এলাকা থেকে শিশু ইলিয়াস খেলতে গিয়ে একটি ধাতব বস্তু পেয়ে কৌতূহলবশত তা নাড়াচাড়া করতে করতে বাড়িতে নিয়ে আসে। এরপর মোবাইলের নষ্ট ব্যাটারির সাথে সংযোগ দিলে হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে তার ডান হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন হয়ে আঙুল খুলে পড়ে যায় এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে ক্ষত হয়।

পরিবারের সদস্যরা রক্তাক্ত অবস্থায় তাৎক্ষণিক তাকে উদ্ধার করে ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে তার অবস্থার অবনতি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরন করেন। বর্তমানে সে সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তার অবস্থা আশংকা জনক।
আহত শিশু ইলিয়াসের বাবা আশরাফুল ইসলাম বলেন, সে খনির পাশ থেকে ওইসব ধাতব পদার্থ কুড়িয়ে এনে বাড়িতে খেলছিল। হঠাৎ বিকট শব্দ শুনে দৌড়ে গিয়ে দেখি আমার ছেলের ডান হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন হয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে কাতরাচ্ছে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির পুর্ব পার্শে প্রাচীর ঘেঁষে তার কাঁটা দিয়ে ঘেরা খনির ডাম্পিং এরিয়া রয়েছে। সেখানে খনির সবধরনের বর্জ্য ও অপ্রয়োজনীয় জিনিস ফেলা হয়। এসব বর্জ্য থেকে কয়লার সন্ধানে এলাকার লোকজন ওই ডাম্পিং এরিয়ায় প্রবেশ করে কয়লা সংগ্রহ করে তা বিক্রি করে। এসব বর্জ্যের সাথে মাঝে মাঝে বিশেষ সরঞ্জাম মেলে । খনি পার্শ্ববর্তী গ্রাম চৌহাটির অনেকেই এই ডাম্পিং গ্রাউন্ড থেকে কয়লা সংগ্রহ করতে গিয়ে ওইসব এক্সক্লসিভ ডিভাইস পেয়ে থাকে। তারা এর বেশি কিছু জানে না। অনেক সময় শিশুরা এসব বাড়িতে এনে খেলে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির ভূগর্ভস্থ এক শ্রমিক বলেন, এগুলো ডেটোনেটর। খনির ভূগর্ভে যেসব স্থানে মেশিন দিয়ে কয়লা কাটা সম্ভব হয়না। সেইসব স্থানে এসব ডেটোনেটর স্থাপন করে ৫০ মিটার দুরুত্ব বজায় রেখে বিস্ফোরন ঘটিয়ে কয়লা সংগ্রহ করা হয়।
এদিকে এ ঘটনায় খনি এলাকাজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয়দের দাবি খনি কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও অসাবধানতার কারনেই এমন দূর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দ্রব্য কিভাবে সহজেই মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে সেটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দেখা প্রয়োজন ।এমন দুর্ঘটনা যেন আর না ঘটে সে জন্য খনির ব্যবহৃত বিস্ফোরক উপাদান ও পরিত্যক্ত দ্রব্যাদি অপসারণে প্রশাসনের আরও সাবধানতা অবলম্বন ও সচেতন হওয়া দরকার।
এদিকে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির মহাব্যবস্থাপক (মাইন অপারেশন) খান মো. জাফর সাদিক জানান, খনির ভূগর্ভে কয়লা উত্তোলনের ক্ষেত্রে বিস্ফোরনের কাজে ডেটোনেটর ব্যবহার করা হয়। এগুলো খুবই স্পর্শ কাতর। এগুলো কোনটি অকেজো এবং কোনটি তাজা তা সাধারণভাবে কেউ বুঝতে পারার কথা নয়।

তাছাড়া খনির বাহিরে প্রাপ্ত ডেটোনেটরে কোন সংযোগ নেই। তবে এগুলো ডাম্পিং গ্রাউন্ড থেকেই কোন না কোন ভাবে ধাতব বস্তু হিসেবে বা শিশুরা খেলনা হিসেবে সংগ্রহ করেছে। এ বিষয়ে আমাদের কোন সম্যক ধারণা ছিল না। ঘটনার পর আমরা জনতে পেরেছি, বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি।
তিনি আরও বলেন, ডেটোনেটর বিস্ফোরনের বিষয়ে ইতোমধ্যে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত শেষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।আহত শিশুর বিষয়ে তিনি বলেন, আগে তার চিকিৎসা চলুক। পরে তার বিষয়ে খনি কতৃপক্ষ সর্বোচ্চ সহযোগীতা করবে এবং তার পাশে থাকবে।
প্রসঙ্গত, এ দুর্ঘটনার পর পুলিশ এবং সেনাবাহিনী ঘটনা স্থল পরিদর্শন করেন। সেনাবাহিনীর একটি দল বিকেলে ডাম্পিং গ্রাউন্ড থেকে সংগৃহিত এলাকার লোকজনের কাছ থেকে শতাধিক ডেটোনেটর তাদের সংরক্ষণে নিয়ে যান। ডেটোনেটর হচ্ছে একটি ছোট বিষ্ফোরক ডিভাইস যা অন্য একটি বড় বিষ্ফোরক দ্রব্যকে বিষ্ফোরিত করতে ব্যবহৃত হয়। এটি সাধারণত বৈদ্যুতিক বা যান্ত্রিক উপায়ে কাজ করে।

ট্যাগস :
আপডেট সময় ০৩:২৯:২৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০২৫
৬৮ বার পড়া হয়েছে

বড়পুকুরিয়ায় বিস্ফোরক দূর্ঘটনায় শিশু শিক্ষার্থী ক্ষতবিক্ষত

আপডেট সময় ০৩:২৯:২৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০২৫

দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং এর পাশে পরিত্যক্ত ডেটোনেটর (বিশেষ বিস্ফোরক ডিভাইস) বিস্ফোরণে এক শিশু শিক্ষার্থীর ডান হাতের কব্জি উড়ে যায়।

মঙ্গলবার (৮ জুলাই) দুপুর ১২টায় পার্বতীপুর উপজেলার বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি সংলগ্ন চৌহাটি গ্রামে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে ।
আহত শিশু ইলিয়াস (১০) চৌহাটি গ্রামের বাসিন্দা আশরাফুল ইসলামের ছেলে। সে চৌহাটি সালাফিয়া মাদ্রাসার নাজেরা বিভাগের শিক্ষার্থী ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার (৮ জুলাই) দুপুর ১২টার দিকে কয়লাখনি এলাকার ডাম্পিং এলাকা থেকে শিশু ইলিয়াস খেলতে গিয়ে একটি ধাতব বস্তু পেয়ে কৌতূহলবশত তা নাড়াচাড়া করতে করতে বাড়িতে নিয়ে আসে। এরপর মোবাইলের নষ্ট ব্যাটারির সাথে সংযোগ দিলে হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে তার ডান হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন হয়ে আঙুল খুলে পড়ে যায় এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে ক্ষত হয়।

পরিবারের সদস্যরা রক্তাক্ত অবস্থায় তাৎক্ষণিক তাকে উদ্ধার করে ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে তার অবস্থার অবনতি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরন করেন। বর্তমানে সে সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তার অবস্থা আশংকা জনক।
আহত শিশু ইলিয়াসের বাবা আশরাফুল ইসলাম বলেন, সে খনির পাশ থেকে ওইসব ধাতব পদার্থ কুড়িয়ে এনে বাড়িতে খেলছিল। হঠাৎ বিকট শব্দ শুনে দৌড়ে গিয়ে দেখি আমার ছেলের ডান হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন হয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে কাতরাচ্ছে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির পুর্ব পার্শে প্রাচীর ঘেঁষে তার কাঁটা দিয়ে ঘেরা খনির ডাম্পিং এরিয়া রয়েছে। সেখানে খনির সবধরনের বর্জ্য ও অপ্রয়োজনীয় জিনিস ফেলা হয়। এসব বর্জ্য থেকে কয়লার সন্ধানে এলাকার লোকজন ওই ডাম্পিং এরিয়ায় প্রবেশ করে কয়লা সংগ্রহ করে তা বিক্রি করে। এসব বর্জ্যের সাথে মাঝে মাঝে বিশেষ সরঞ্জাম মেলে । খনি পার্শ্ববর্তী গ্রাম চৌহাটির অনেকেই এই ডাম্পিং গ্রাউন্ড থেকে কয়লা সংগ্রহ করতে গিয়ে ওইসব এক্সক্লসিভ ডিভাইস পেয়ে থাকে। তারা এর বেশি কিছু জানে না। অনেক সময় শিশুরা এসব বাড়িতে এনে খেলে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির ভূগর্ভস্থ এক শ্রমিক বলেন, এগুলো ডেটোনেটর। খনির ভূগর্ভে যেসব স্থানে মেশিন দিয়ে কয়লা কাটা সম্ভব হয়না। সেইসব স্থানে এসব ডেটোনেটর স্থাপন করে ৫০ মিটার দুরুত্ব বজায় রেখে বিস্ফোরন ঘটিয়ে কয়লা সংগ্রহ করা হয়।
এদিকে এ ঘটনায় খনি এলাকাজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয়দের দাবি খনি কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও অসাবধানতার কারনেই এমন দূর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দ্রব্য কিভাবে সহজেই মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে সেটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দেখা প্রয়োজন ।এমন দুর্ঘটনা যেন আর না ঘটে সে জন্য খনির ব্যবহৃত বিস্ফোরক উপাদান ও পরিত্যক্ত দ্রব্যাদি অপসারণে প্রশাসনের আরও সাবধানতা অবলম্বন ও সচেতন হওয়া দরকার।
এদিকে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির মহাব্যবস্থাপক (মাইন অপারেশন) খান মো. জাফর সাদিক জানান, খনির ভূগর্ভে কয়লা উত্তোলনের ক্ষেত্রে বিস্ফোরনের কাজে ডেটোনেটর ব্যবহার করা হয়। এগুলো খুবই স্পর্শ কাতর। এগুলো কোনটি অকেজো এবং কোনটি তাজা তা সাধারণভাবে কেউ বুঝতে পারার কথা নয়।

তাছাড়া খনির বাহিরে প্রাপ্ত ডেটোনেটরে কোন সংযোগ নেই। তবে এগুলো ডাম্পিং গ্রাউন্ড থেকেই কোন না কোন ভাবে ধাতব বস্তু হিসেবে বা শিশুরা খেলনা হিসেবে সংগ্রহ করেছে। এ বিষয়ে আমাদের কোন সম্যক ধারণা ছিল না। ঘটনার পর আমরা জনতে পেরেছি, বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি।
তিনি আরও বলেন, ডেটোনেটর বিস্ফোরনের বিষয়ে ইতোমধ্যে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত শেষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।আহত শিশুর বিষয়ে তিনি বলেন, আগে তার চিকিৎসা চলুক। পরে তার বিষয়ে খনি কতৃপক্ষ সর্বোচ্চ সহযোগীতা করবে এবং তার পাশে থাকবে।
প্রসঙ্গত, এ দুর্ঘটনার পর পুলিশ এবং সেনাবাহিনী ঘটনা স্থল পরিদর্শন করেন। সেনাবাহিনীর একটি দল বিকেলে ডাম্পিং গ্রাউন্ড থেকে সংগৃহিত এলাকার লোকজনের কাছ থেকে শতাধিক ডেটোনেটর তাদের সংরক্ষণে নিয়ে যান। ডেটোনেটর হচ্ছে একটি ছোট বিষ্ফোরক ডিভাইস যা অন্য একটি বড় বিষ্ফোরক দ্রব্যকে বিষ্ফোরিত করতে ব্যবহৃত হয়। এটি সাধারণত বৈদ্যুতিক বা যান্ত্রিক উপায়ে কাজ করে।