কেশবপুরে জন্মাষ্টমী পালন: বিএনপির দুই কেন্দ্রীয় নেতার পৃথক কর্মসূচি


যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলায় জন্মাষ্টমী পালনের জন্য বিএনপি-এর দুই নেতা পৃথক পৃথক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেছেন, যা দলের অভ্যন্তরীণ বিভেদের ইঙ্গিত বহন করছে।
কেশবপুর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত মঙ্গল শোভাযাত্রায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও কেশবপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ্ব আবুল হোসেন আজাদ। এই শোভাযাত্রায় বিভিন্ন ইউনিয়ন পূজা পরিষদ এবং উপজেলা, পৌর ও বিভিন্ন ইউনিয়ন পর্যায়ের বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবকদল, কৃষকদল এবং মহিলাদলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এনসিপি নেতাদের দুই পক্ষেরই উপস্থিতি দেখা গেছে।
একই দিনে কেশবপুর সার্বজনীন জন্মাষ্টমী উদযাপন কমিটি পৃথক একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এই কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু। তার উপস্থিতিতে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, শ্রী শ্রী গীতা পূজা, গীতা পাঠ, ধর্মীয় সংগীত, চিত্রাংকন, মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বালন, আলোচনা সভা ও প্রসাদ বিতরণ করা হয়। জামাতে ইসলামীর অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। অমলেন্দু দাস অপুর একক উপস্থিতি ইঙ্গিত দেয় যে, তিনি স্থানীয় রাজনীতিতে নিজের অবস্থান শক্তিশালী করতে বা দলের মধ্যে নিজস্ব একটি বলয় তৈরি করতে আগ্রহী ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন দুই প্রভাবশালী নেতার একই দিনে আলাদা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ স্থানীয় রাজনীতিতে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এটি দলের মধ্যেকার নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব এবং বিভাজনের সুস্পষ্ট প্রতিফলন। সাধারণত, এ ধরনের ধর্মীয় বা সামাজিক অনুষ্ঠানে স্থানীয় নেতাদের একত্রিত হয়ে অংশগ্রহণ করা প্রত্যাশিত হলেও, এখানে তা না হওয়ায় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, দলীয় কোন্দল এখন প্রকাশ্যে এসেছে। এই ঘটনা দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং কর্মীদের মধ্যে বিভাজন আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বিএনপির দুই কেন্দ্রীয় নেতার ভিন্ন ভিন্ন আয়োজনে অংশগ্রহণ স্থানীয় রাজনীতিতে বিভাজন ও ক্ষমতার দ্বন্দ্বের বিষয়টি স্পষ্ট করেছে।
সাধারণত, এমন পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক কৌশলগত কারণে একই দলের দুই নেতা আলাদা আয়োজনে অংশ নেন না, কারণ এতে দলের মধ্যে অনৈক্যের বার্তা যায়। কিন্তু কেশবপুরের এই ঘটনা কয়েকটি বিষয় সামনে নিয়ে আসে:
* ক্ষমতার দ্বন্দ্ব: এটি দলের স্থানীয় নেতৃত্বের মধ্যে চলমান ক্ষমতার দ্বন্দ্বের একটি বহিঃপ্রকাশ হতে পারে। আবুল হোসেন আজাদ স্থানীয়ভাবে দলের সভাপতি হিসেবে নেতৃত্ব দিলেও, কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে অমলেন্দু দাস অপুর একটি আলাদা প্রভাব রয়েছে। এই দুই নেতার মধ্যে কে বেশি জনসমর্থন বা দলীয় নেতাকর্মীর সমর্থন আদায় করতে পারেন, তার একটি নীরব প্রতিযোগিতা চলছে বলে মনে হয়।
* সংগঠনিক দুর্বলতা: যদি দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে এমনটি না হয়ে থাকে, তবে এটি স্থানীয় পর্যায়ে দলের সংগঠনিক দুর্বলতা ও সমন্বয়হীনতার ইঙ্গিত দেয়। একই দলের দুই প্রভাবশালী নেতার ভিন্ন ভিন্ন প্ল্যাটফর্মে অংশগ্রহণ দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে এবং তাদের মনোবল দুর্বল করতে পারে।
* ভোটের রাজনীতি: আগামী নির্বাচনের আগে হিন্দু ধর্মাবলম্বী ভোটারদের কাছে পৌঁছানোর একটি কৌশল হিসেবেও এই আলাদা আয়োজনকে দেখা যেতে পারে। দুই নেতা হয়তো আলাদা প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আরও বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছাতে চেয়েছেন। তবে, এটি একটি বিভক্তিকর পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
সুশীল সমাজে নেতারা মনে করেন কেশবপুরের জন্মাষ্টমী অনুষ্ঠানে বিএনপির দুই নেতার ভিন্ন ভিন্ন উপস্থিতি স্থানীয় রাজনীতিতে বিএনপির অভ্যন্তরীণ বিভাজনকে আরও স্পষ্ট করেছে। এটি দলটির জন্য একটি ইতিবাচক বার্তা নয়, কারণ ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে না পারলে তা ভবিষ্যতে তাদের রাজনৈতিক অবস্থানকে দুর্বল করতে পারে।