সিরাজদিখান যুবদল সদস্য সচিবের বিরুদ্ধে নানা অন্যায় অপকর্মের অভিযোগ

মুন্সিগঞ্জ সিরাজদিখান উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব শাহাদাৎ শিকদারের বিরুদ্ধে একাধিক অনিয়ম,দুর্নীতি ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় বিএনপি ও যুবদলের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ তার এসব কর্মকাণ্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
অভিযোগ রয়েছে, শাহাদাৎ শিকদার সিরাজদিখান বাজারের শিকদার জেড এইচ শপিং কমপ্লেক্সে জোরপূর্বক একটি দোকান ঘর দখল করে সেখানে যুবদলের অফিস স্থাপন করেছেন।দীর্ঘদিন ধরে তিনি দোকানটির ভাড়া পরিশোধ করছেন না।বর্তমানে ওই দোকান ঘরটি উপজেলা যুবদলের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
এছাড়া আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়া এবং সংগঠনের ব্যানারে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের নামে বিভিন্ন ব্যক্তি,সংগঠন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগও রয়েছে।অভিযোগ অনুযায়ী,এসব চাঁদার টাকা কার্যক্রমে ব্যয় না করে তিনি আত্মসাৎ করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সিরাজদিখান বাজারসংলগ্ন সর্দারপাড়া এলাকার কয়েকজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীর আশ্রয়দাতা হিসেবে পরিচিত যুবদল কর্মী আক্তার সর্দার শাহাদাৎ শিকদারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী।অভিযোগ রয়েছে, শাহাদাৎ শিকদার তার মাধ্যমে মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়মিত মাসোয়ারা নেন।বিষয়টি এলাকাবাসীর জানা হয়ে গেলে তিনি উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক সদস্য শিফাতুল ইসলাম জনির বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসার অপপ্রচার চালিয়ে নিজের অপকর্ম আড়াল করার চেষ্টা করেন।
এ বিষয়ে শিফাতুল ইসলাম জনি বলেন,কার ছত্রছায়ায় কারা মাদক ব্যবসা করে, তা পুলিশ প্রশাসন জানে।কেউ যদি আমার বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসার প্রমাণ দিতে পারে, আমি তাকে পুরস্কৃত করব।যারা আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে, তারা নিজেদের অন্যায় অপকর্ম ঢাকতে এসব করে।
এর আগে ২০২৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিভিন্ন গণমাধ্যমে “সিরাজদিখানে এতিমদের জন্য অনুদানের ১ লাখ টাকা আত্মসাৎ” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়,রশুনিয়া ইউনিয়নের আল্লামা আফজাল আহমাদ দারুল কুরআন হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার জন্য ফ্রান্স প্রবাসী শাহ আলমের দেওয়া অনুদানের টাকা আত্মসাৎ করেন শাহাদাৎ শিকদার।এ ঘটনায় দলীয় মহলে ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি হয়। সে সময় প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ দিয়ে অর্থ আত্নসাতের ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়া চেষ্টা করে ব্যর্থ হন শাহাদাৎ শিকদার।এক পর্যায়ে মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা শরিফুল ইসলাম মাহমুদিকে চাপ প্রয়োগ করে ভিডিও বক্তব্যে শাহাদাৎ শিকদারকে নির্দোষ হিসেবে উপস্থাপন করতে বাধ্য করা হয়।
এদিকে তার বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে কেন্দ্র থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করা হলেও রহস্যজনক কারণে বিষয়টি পরে ধামাচাপা পড়ে যায়।
সম্প্রতি বন্ধন সংঘের আয়োজনে রাজদিয়া মাঠে অনুষ্ঠিত হা ডু ডু টুর্নামেন্টে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিশেষ অতিথি করা নিয়েও সমালোচনা দেখা দেয়।এছাড়া থানার আয়োজনে অনুষ্ঠিত এক মাদক বিরোধী সভায় শাহাদাৎ শিকদারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী আক্তার সর্দারসহ তার অনুসারীদের উপস্থিতি প্রশ্ন তুলেছে স্থানীয়দের মধ্যে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে,শাহাদাৎ শিকদারের এসব কর্মকাণ্ডের কারণে সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। স্থানীয় নেতাকর্মীরা তার বিরুদ্ধে বারবার সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানালেও এখনো কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে,এমন নেতাদের বিরুদ্ধে সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে সংগঠনের ভাবমূর্তি ও ভবিষ্যৎ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব শাহাদাৎ শিকদার কাছে অভিযোগ সমূহের ব্যপারে জানতে চাইলে তিনি অভিযোগ সমূহ অস্বীকার করেন এবং প্রতিবেদকে তথ্য যাচাই বাছাই করে তারপর প্রকাশের অনুরোধ জানান।
উপজেলা মৎসবীজি দলের সাধারণ সম্পাদক মোঃ গুলজার বলেন, তার বিরুদ্ধে অনেক কথাই শুনেছি। মাদরাসার টাকা পয়সা আত্নসাতের বিষয়টি মানুষের কাছেই শোনা। মানুষ হিসেবে সে ভালো হলেও আওয়ামী লীগের লোকজন নিয়ে চলে।
উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম হায়দার আলীর মুঠোফোন একাধিক বার ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায় নি।










