কমরেড রনো বেঁচে থাকবে মুক্তি সংগ্রামের প্রতিটি পদক্ষপে
প্রয়াত কমরেড হায়দার আকবর খান রনো ছিলেন আজীবন সংগ্রামী, ৬০ এর দশকের নেতৃস্থানীয় তুখোড় ছাত্রনেতা, কমিউনিস্ট আন্দোলনের অন্যতম প্রবাদপুরুষ, অনলবর্ষী, প্রখর মেধাসম্পন্ন, বুদ্ধিজীবি, লেখক ও সাহিত্যবিশারদ। তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরষ্কারে ভূষিত হন। ছিলেন অনন্য এক ব্যক্তিত্বের অধিকারী। যে কেউ তার স্পর্শে এলে মুগ্ধ হতেন।
দিনাজপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে কমরেড রনো’র শোকসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অর্থনীতিবীদ অধ্যাপক এমএম আকাশ কমরেড রনো’র স্মৃতি চারণ করে বলেন, তিনি খুব সহজ সরল নিরহংকার জীবন যাপন করতেন। কাজ করতেন দরিদ্র জনগোষ্টিকে নিয়ে। সহজে মিশতে পারতেন সবার সাথে। চলমান পাঠশালা বলা হতো তাকে, সকলের মাঝে জ্ঞানের আলো বিতরণ করতেন। উপস্থিত বুদ্ধিও ছিল তার, যে কোন পরিস্থিতি সামলে নিতে পারতেন। তিনি সার্বক্ষনিক রাজনীতিবিদ, আজীবন শোষণ মুক্তির সংগ্রামে এবং অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে আপোসহীন সংগ্রামে শারীরিক ও বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে সক্রিয় ছিলেন। সমাজতান্ত্রীক ধারার রাজনীতির এবং সংস্কৃতিক অঙ্গনে যে সংকট তৈরি হয়েছে সেই সংকট উত্তরণে কমরেট রনো’র দর্শন ও আদর্শকে অনুসরণ করতে হবে। তিনি মনে করতেন, চীনপন্থী ও মস্কোপন্থী বির্তক এখন প্রাসঙ্গিক না। সামরাজ্যবাদ, সাম্প্রদায়িকতা এবং গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। অর্থনীতির মুক্তির জন্য শোষণমুক্ত সমাজ গঠনে তিনি দ্বি—দলিয় নীতির বাহিরে তৃতীয় ধারা তৈরি করে একটা বিপ্লব তৈরি করতে চেয়েছিলেন সকলকে নিয়ে। ঐক্যবদ্ধ এই লড়াইয়ে কালচারাল ফোর্স এবং পলিটিক্যাল ফোর্স লাগবে। সেই বিপ্লবী ফোর্সের ক্ষেত্র তৈরি হয়ে আছে। যার মূল চালিকা শক্তি হবে শ্রমিক, কৃষক ও মধ্যবিত্তরা।
৪ জুন বিকালে দিনাজপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে কমরেড রনো’র শোকসভা আয়োজন কমিটি দিনাজপুরের আহবায়ক কবি, সাহিত্যিক ও ছড়াকার অধ্যাপক জলিল আহমেদের সভাপতিত্বে ও মনিমেলার সভাপতি নুরুল মতিন সৈকতের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সরণ সভায় প্রয়াত কমরেড আকবর খান রনো’র কর্মময় জীবন ও দর্শনের ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিপ্লবী কমিউনিস্টলীগ দিনাজপুরের সাধারণ সম্পাদক আক্তার আজিজ। অন্যদের মধ্যে স্মৃতিচারণ করেন বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পাটির কেন্দ্রয়ী কমিটির সদস্য আলতাফ হোসেইন, দিনাজপুর জেলা কমিটির সভাপতি অ্যাড. মেহেরুল ইসলাম, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের কেন্দ্রীয় সম্পাদক মোশারফ হোসেন নান্নু, জেলা জাসদের সভাপতি অ্যাড. লিয়াকত আলী, জেলা বাসদের সমস্বয়ক কমরেট কিবরিয়া হোসেন দিনাজপুর নাট্য সমিতির সভাপতি ও জেষ্ঠ্য সাংবাদিক চিত্ত ঘোষ, দৈনিক ভোরের আকাশের প্রকাশক কমরেড এসএম আব্দুল্যাহ নুরুজ্জামান, উদীচী কেন্দীয় কমিটির সহ—সভাপতি রেজাউল রহমান রেজু, সাম্যবাদী আন্দোলনের সমন্বয়ক কমরেড মনিরুজ্জামান মনির, বাংলাদেশ ওয়াকার্স পাটির দিনাজপুর জেলা শাখার সম্পাদক কমরেড হবিবর রহমান, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট দিনাজপুরের সভাপতি সুলতান কামাল উদ্দীন বাচ্চু, মহিলা পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কানিজ রহমান। আলোচকবৃন্দ বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সমন্বয় কমিটির নেতৃত্বে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় কমরেড হায়দার আকবর খান রনো ১৪ টি সশস্ত্র ঘাটি তৈরি করে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন সিপিবি’র প্রেসিডিয়াম সদস্য হয়ে দয়িত্ব পালন করেন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত সিপিবি’র উপদেষ্টা ছিলেন। তার দক্ষ ও যোগ্য নেতৃত্বে ছাত্র ইউনিয়ন দেশের বৃহত্তর ছাত্র সংগঠনে পরিণত হয়। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত শ্রমিক শ্রেণির মুক্তি সংগ্রামে সর্বাত্মক নিয়োজিত ছিলেন। বক্তারা বলেন, তিনি বেঁচে থাকবেন আমাদের মুক্তি সংগ্রামের প্রতিটি পদক্ষেপে।